ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস
ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (deep vein thrombosis – DVT)
শরীরের গভীর শিরা
গুলোর যে কোন একটিতে রক্ত জমাট বেধে যাওয়াকে বলা হয় ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস। ইংরেজিতে
সংক্ষেপে বলা হয় DVT।
এটি সাধারণত পায়ের
ভিতরের দিকে একটি শিরায় হয়। যে শিরাটি পায়ের গোছার মাংসপেশী (calf muscle) হয়ে উরুর
মাংসপেশীর ভিতর দিয়ে উপরে উঠে যায় সেই শিরায় হয়। এর কারনে পায়ে ব্যথা হয়, ফুলে যায়।
সবচেয়ে বিপদজনক হলো এর থেকে পালমোনারি এম্বোলিজম (pulmonary embolism) হতে পারে, যার
কারনে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
কাদের ঝুকি বেশি
যে কারোরই এটা হতে
পারে, তবে বয়সের সাথে সাথে এর ঝুকি বেড়ে যায়। ঝুকির মধ্যে আরো যা রয়েছে
ওজন বেশি অর্থাৎ স্থূলকায় হলে
হার্ট ফেইলর (heart failure) বা ক্যান্সার থাকলে
দীর্ঘ দিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হলে, যেমন, কোন
অপারেশনের পর বা এমন অসুস্থতা যার কারনে শয্যাশায়ী থাকতে হয়
প্রসবের সময় যেন রক্তক্ষরন কম হয়, তার প্রস্তুতি
হিসাবে শরীর গর্ভাবস্থাতেই রক্তের জমাট বাধার প্রবনতা বৃদ্ধি করতে থাকে। যার কারনে
গর্ভাবস্থায় DVT হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। প্রতি ১০০০ জনে ১ জন গর্ভবতী মেয়ের তার গর্ভাবস্থার
কোন একটা পর্যায়ে DVT হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
কখন সতর্ক হবেন
কিছু কিছু ক্ষেত্রে
DVT এর কোন চিহ্ন বা লক্ষন থাকে না। যে লক্ষন গুলো দেখা গেলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে
যোগাযোগ করবেন সেগুলো হলো
যে কোন এক পায়ে, বিশেষ করে পায়ের গোছার মাংশপেশীর
কাছে যদি ফোলা, ব্যথা এবং চাপ দিলে ব্যথা অনুভূত হয়, এবং দাঁড়িয়ে থেকে হাঁটু ভাঁজ করে
পায়ের পাতা উরুর দিকে তুললে যদি ব্যথা বেড়ে যায়
১. আক্রান্ত স্থানে যদি তীব্র ব্যথা হয়
২.আক্রান্ত স্থানের ত্বক যদি গরম হয়ে থাকে
৩.আক্রান্ত স্থান বিশেষ করে পায়ের পিছন দিকে গোছার
মাংশপেশীর স্থানটি যদি লাল হয়ে ফুলে উঠে
DVT-এর ঠিকমত চিকিৎসা
না হলে এর থেকে পালমোনারি এম্বোলিজম (pulmonary embolism) হতে পারে। DVT-এর জমাট বাধা
রক্ত যখন সেখান থেকে ছুটে গিয়ে, রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে শ্বাসতন্ত্রের প্রধান
শিরা বা কোন শাখা শিরায় আটকে যায় এবং সেই রক্তনালীতে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়, তখন
সেটাকে পালমোনারি এম্বোলিজম বলে। এর লক্ষন হলো
১.শ্বাসকষ্ট, যা হঠাৎ করে শুরু হতে পারে বা ধীরে
ধীরেও শুরু হতে পারে
২.বুকে ব্যথা, যা শ্বাস টানার সময় বেড়ে যায়৩.হঠাৎ করে শরীরবৃত্তীয় সব কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে
DVT এবং পালমোনারি
এম্বোলিজম দুটিই খুব মারাত্মক বিপদ দেকে আনতে পারে। দুটিরই দ্রুত নির্ণয় এবং দ্রুত
চিকিৎসা প্রয়োজন।
রোগ নির্ণয়
রোগীর ইতিহাস এবং
শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে DVT নির্ণয় করা হয়। আক্রান্ত পায়ের
ড্রপলার স্টাডির মাধ্যমে রক্ত জমাট বাধার স্থান এবং জমাট রক্তের আকার সম্পর্কে ধারনা
পাওয়া যায়। D-dimers এবং INR – এই পরীক্ষা দুটি রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে সহায়তা
করে।
জটিলতা
DVT থেকে প্রধান
যে জটিলতা হতে পারে তা হলো, পালমোনারি এম্বোলিজম এবং পোস্ট থ্রম্বোটিক সিন্ড্রোম
(post-thrombotic syndrome)। পালমোনারি এম্বোলিজম কি ভাবে হয় সেটা নিয়ে ইতিপূর্বে আলোচনা
করা হয়েছে। এম্বলাস বা জমাট বাধা রক্তের আকার যদি ছোট হয় তবে কোন লক্ষন নাও থাকতে পারে।
এর আকার যদি মাঝারি হয় তবে শ্বাসকষ্ট এবং বুকে ব্যথা হতে পারে। আর যদি এর আকার বড় হয়
তবে ফুসফুস অকার্যকর হয়ে হার্ট ফেইলর পর্যন্ত হতে পারে।
যদি ঠিকমত চিকিৎসা
না হয়, তবে DVT আক্রান্তদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে ১ জনের পালমোনারি এম্বোলিজম হতে পারে,
যার পরিণতি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
যাদের দীর্ঘদিন
ধরে DVT আছে তাদের পোস্ট থ্রম্বোটিক সিন্ড্রোম হতে পারে। যাদের ইতিপূর্বে DVT হয়েছিল
তাদের এই সিন্ড্রোম হওয়ার সম্ভবনা বেশি। এক্ষেত্রে যা ঘটে তা হলো, শিরার মধ্যে জমাট
রক্তের উপস্থিতির কারনে রক্ত প্রবাহে বাধা পায়, ফলে সেখানে প্রদাহ হয়। প্রদাহের কারনে
শিরার মধ্যে যে বাল্ব থাকে তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শিরার এই বাল্বের কাজ হলো শিরার রক্ত
যেন শুধু একদিকে প্রবাহিত হয় তা নিয়ন্ত্রন করা। পায়ের গোছার শিরার মধ্য দিয়ে রক্ত শুধু
উপরে উরুর দিকে যায়, বাল্ব রক্তকে উরু থেকে নিচের দিকে আসতে বাধা দেয়। কিন্তু DVT-এর
কারনে বাল্ব নষ্ট হয়ে গেলে, রক্ত উরু থেকে নিচে নেমে এসে পায়ের গোছার শিরার মধ্যে জমা
হয়। রক্তের চাপে শিরা থেকে রক্ত চুইয়ে বের হয়ে এসে পায়ের গোছার পেশীতে জমা হয়। এতে
যে লক্ষন দেখা দেয় তা হলো
পায়ের গোছায় ব্যথা
ঐ স্থান ফুলে যাওয়া
ঐ স্থানে ফুসকুড়ি (rash) দেখা দেয়া
জটিল আকার ধারন করলে আক্রান্ত স্থানে ক্ষত তৈরি
হওয়া
DVT যদি উরুর গভীরের
শিরায় হয় তবে পোস্ট থ্রম্বোটিক সিন্ড্রোম হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। এছাড়া স্থূলকায়
হলে বা একই পায়ে একাধিক DVT থাকলে এর সম্ভবনা বেশি থাকে।
DVT না হওয়ার জন্য
করনীয়
এক্ষেত্রে অনেক
কিছুই করার আছে। ধূমপান বন্ধ করুন। স্থূলকায় হয়ে থাকলে ওজন কমান। নিয়মিত হাটুন, হাটলে
রক্ত চলাচল ভাল থাকে ফলে রক্ত জমাট বাধতে পারে না। যদি আপনার DVT হওয়ার ঝুকি থাকে,
তবে ডাক্তার হয়তো আপনাকে ‘রক্ত জমাট বাধতে বাধা দেয়’ এমন ওষুধ খেতে বলবেন, বিশেষ ধরনের
মোজা পরতে বলবেন। যদি লম্বা সময়ের জন্য ভ্রমন করতে হয়, প্রচুর পানি পান করুন, মাঝে
মাঝে হাটু সোজা করে এবং ভাজ করে ব্যায়াম করুন, যখনই সুযোগ হয় উঠে একটু হাটাহাটি করুন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন